সীমান্তে তৎপর বিজিবি : এক বছরে ৪২ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ
- আপলোড সময় : ০৪-০১-২০২৫ ০৫:১৪:৩৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০১-২০২৫ ০৫:১৪:৩৩ পূর্বাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
তানভীর আহমেদ ::
গত এক বছরে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় পৃথক পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ৪২ কোটি ২৫ লাখ টাকার বেশি চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে ২৮ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন। এছাড়া গত বছরে সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দেশি-বিদেশি ৪৪ জন নাগরিককে আটক করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ বিজিবি ব্যাটালিয়ন কর্তৃক ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জব্দকৃত এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ২টি বিদেশি অস্ত্র, ৬টি ডিনামাইট এবং ৬টি ডেটোনেটর বিস্ফোরক, ৪২৭ পিস ইয়াবাসহ নেশা জাতীয় অন্যান্য ট্যাবলেট, ২৪ হাজার ৫০১ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, ৩৪ কেজি গাঁজা, বিপুল পরিমাণ বিদেশী শাড়ি, কসমেটিক্স, চিনি, ফুসকা, কম্বল, গরুসহ দেশ থেকে পাচার হওয়া রসুনের বিশাল চালান। এছাড়া অবৈধ মালামালসহ বেশকিছু যানবাহনও জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ২৩টি ট্রাক, ৫৬টি মোটর সাইকেল, ১৮টি অটোরিকসা ও ৩২৩টি নৌকা জব্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ.কে.এম. জাকারিয়া কাদির দৈনিক সুনামকণ্ঠকে এ তথ্য জানান।
সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন ২৮ বিজিবি জানায়, জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত জব্দকৃত অবৈধ মালামালের সর্বমোট সিজার মূল্য ৪২ কোটি ২৫ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৩ টাকা। এর মধ্যে অবৈধ মালামালসহ জব্দকৃত যানবাহনের সিজার মূল্য ১২ কোটি ৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬শত টাকার বিদেশি শাড়ি, ১ কোটি ৯ হাজার ৮শ ৩টাকার কসমেটিক্স, দেশ থেকে পাচার হওয়া জব্দকৃত রসুন ২২ লাখ ১ হাজার ৩৬০টাকা, এছাড়া অন্যান্য মালামালের সিজার মূল্য ২৫ কোটি ৬৩ লাখ ৩৭ হাজার ২০ টাকা বলে জানায় বিজিবি।
সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন ২৮ বিজিবি আরও জানায়, তাদের অধীনে ২০টি বিওপি রয়েছে। বিওপি গুলো হলো- মাটিরাবন, বাংগালভিটা, বীরেন্দ্রনগর, চারাগাঁও, বালিয়াঘাটা, টেকেরঘাট, চাঁনপুর, লাউরগড়, মাছিমপুর, চিনাকান্দি, ডুলুরা, নারায়ণতলা, চিনাউড়া, বনগাঁও, আশাউড়া, মাঠগাঁও, বাগানবাড়ি, পেকপাড়া, বাঁশতলা ও ব্যাটালিয়ন সদর। এর মধ্যে শুধুমাত্র ডলুরা বিওপিতে ১ বছরে ১২ কোটি ৯২ লাখ ১৯ হাজার ১৭ টাকার বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়েছে। আর ২০টি বিওপি মিলে জানুয়ারিতে ২ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৩৮০ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৪৪ হাজার ৪০৭ টাকা, মার্চ মাসে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৮১ হাজার ২৭০ টাকা, এপ্রিলে ২ কোটি ৩১ হাজার ৫৬০ টাকা, মে মাসে ৫ কোটি ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৬ টাকা, জুনে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৫ টাকা, জুলাইয়ে ১ কোটি ৪০ লাখ ৩১ হাজার ৭৮৬ টাকা, আগস্টে ১ কোটি ৫৪ হাজার ৭৩০ টাকা, সেপ্টেম্বরে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৮ হাজার ১০২ টাকা, অক্টোবরে ১১ কোটি ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৬ টাকা, নভেম্বরে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৯৪ হাজার ৪৩৭ টাকা এবং সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।
গত সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) অধীনস্থ বিভিন্ন বিওপি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ ভারতীয় গরু, চিনি, কয়লা, শুটকী, কমলা, মদ, বিয়ার, বালু ও বাংলাদেশী সুপারিসহ ১টি যানবাহন জব্দ করে বিজিবি। বিজিবি জানায় এদিন সীমান্তের আনুমানিক ১৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মালিকবিহীন ভারতীয় ১৬টি গরু, ৯৫ কেজি চিনি, ১ হাজার কেজি কয়লা, ৩২০ কেজি শুটকী, ৪৪০ কেজি কমলা, ৪৩ বোতল ভারতীয় মদ, ৬ বোতল বিয়ার, ১৭০ ঘনফুট বালু এবং ২৭০ কেজি বাংলাদেশী সুপারি ও ১টি যানবাহন আটক করা হয়। যার সর্বমোট সিজার মূল্য ৩০ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
এর আগে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় অবৈধ মালামাল জব্দ করে ২৮ বিজিবি সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন। জব্দকৃত মালমালের মধ্যে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় জর্জেট থান কাপড়, জামা, কসমেটিক্স সামগ্রী, চিনি, ফুচকা, কম্বল ও মদ রয়েছে। উপজেলার চিনাকান্দি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবির বিশেষ টহল চলাকালীন সময়ে ২টি পিকআপসহ ভারতীয় এসব মালামাল জব্দ করা হয়। একইদিনে চিনাকান্দি বিওপি সীমান্তের জিগাতলা এলাকা দিয়ে চোরাচালানের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশকালে দুই বাংলাদেশিকে আটক করে ২৮ বিজিবি সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন। আটক দুজন হলেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শিলডোয়ার গ্রামের মো. কাদির মিয়ার ছেলে মো. রাসেল মিয়া (২৪), রাজাপাড়া গ্রামের মো. সুলতান মিয়ার ছেলে মো. মোবারক হোসেন (২৫)।
১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় সিঙ্গানিয়া ফেব্রিকের থানকাপড়, কসমেটিক্স এবং মদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত এসব পণ্যের মোট মূল্য ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪৫০ টাকা বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন। এছাড়া গত ১৬ ডিসেম্বর ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় হাজীপাড়া এলাকার সুরমা নদী থেকে স্টিল বডি নৌকাসহ প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ ভারতীয় শাড়ি, প্যান্টের পিস, থ্রি পিস, পায়জামা, মকমল ও থান কাপড় জব্দ করা হয়।
এদিকে গত ৬ ডিসেম্বর সিভিল সোর্সের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাহিরপুর সীমান্ত থেকে লং রেঞ্জ শুটিং রাইফেলসহ (প্রাণঘাতী) তিনজনকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এইদিন রাত ৮টায় ২৮ বিজিবি সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান বিজিবির সিলেট সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। আটকরা হলেন বড়চড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মো. রাজু আহম্মেদ (২১), মো. আলতু মিয়ার ছেলে মো. জালাল মিয়া (২৩) ও নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. রাসেল মিয়া (২৫)।
সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন ২৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ.কে.এম. জাকারিয়া কাদির বলেন, সীমান্ত দিয়ে দেশে কোনো অবৈধ পণ্য, মাদক কিংবা বিদেশী অস্ত্র যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একইসাথে সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে চোরাকারবারিদের কঠোর হস্তে দমন করতে বিজিবি বদ্ধপরিকর। তিনি আরও বলেন, সীমান্তে বিজিবি নিরলসভাবে টহল অব্যাহত রাখায় ১ বছরে ৪২ কোটি টাকারও বেশি এই বিশাল চোরাচালান পণ্য জব্দ করা সম্ভব হয়েছে। সীমান্তের চোরাচালান রোধের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক কিংবা মানবপাচার রোধেও আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ